স্যার স্যার, ভাইয়া ভাইয়া ডাকার পরও আর্মি-পুলিশ আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি – চিত্রা চাকমা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
চিত্রা চাকমা, স্বামী– সোনামুনি চাকমা,গ্রাম– জয়কুমার কার্বারী পাড়া, দিঘীনালা। গত ১৭ এপ্রিল ২০১১ স্বামী সোনামুনি চাকমা সহ চট্টগ্রাম থেকে শান্তি পরিবহনে করে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে রামগড়ের জালিয়া পাড়ায় সেটলারদের হামলার শিকার হন। এ সময় তিনি আর্মি-পুলিশকে উদ্দেশ্য করে স্যার স্যার, ভাইয়া ভাইয়া করে ডেকেও তাদের কোন সহযোগিতা পাননি। সেটলারদের কবল থেকে সেদিন কিভাবে তারা রক্ষা পেয়েছেন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বললেন:
আমরা চট্টগ্রামে যাই। সেখান থেকে আসার পথে জালিয়া পাড়ায় ঘটনার সামনে পড়ি। আমাদের গাড়ির জানালা বাঙালিরা ভেঙে দেয়। এ সময় আমাদের সামনে বসা চাকমা ছেলেদের বাঙালিরা মারধর করছে। এ দৃশ্য দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার মাথায় পানি ঢেলে দিতে হয়। গাড়িতে খাগড়াছড়ি থেকে যেসব যাত্রী ছিল তারা আমাকে গাড়ির সিটের নীচে লুকিয়ে রাখে। তখন কোন রকমে বেঁচে যায়।
আমরা গাড়ির সিটের নীচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় বিকেলের দিকে গাড়ি থেকে সব যাত্রী নেমে যায়৷ তখন আমরা যে বেঁচে থাকবো তার আর কোন আশা ছিল না। পালিয়ে যাবার চেয়েও পালিয়ে যেতে পারিনি। তাই আমরা গাড়ির সিটের নীচেই লুকিয়ে ছিলাম।
পরে আরো ৩ জন বাঙালি এসে আমাদের অত্যাচার করে। টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন সব কেড়ে নিয়ে যায়। তখন আমি কান্না-কাটি করতে থাকি। আমাদেরকে উদ্ধার করার মতো তখন আর কেউ ছিল না। পরে আরো ৪ জন বাঙালি আসে৷ তারা আমাকে বেইজ্জত করার জন্য টানাটানি করে। গাড়ি থেকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে। বাঙালিরা ছুরি বের করে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। এ সময় আমি মরি বাঁচি চিত্কার দিতে থাকি। আমার চিত্কার শুনে আর্মি পুলিশ সেখানে যায়। তখন আমি আর্মি পুলিশকে উদ্দেশ্যে ‘স্যার স্যার, ভাইয়া ভাইয়া বলে ডেকে আকুতি মিনতি করে বলি আমাদেরকে আপনারা ছাড়া বাঁচানোর মতো কেউ নেই। আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি৷ ভগবান হলেও আপনারা। আপনারাই আমাদেরকে বাঁচাতে পারবেন। আমি একজন মহিলা। আমাকে বাঁচান৷‘ তারপরও আর্মি পুলিশ আমাদেরকে কোন সহযোগিতা করেনি। পুলিশ যারা ছিল তারা আমাদেরকে দেখে দেখে চলে আসে।
ঘটনা থেকে বেঁচে গেলে আমার স্বামী শ্রমণ হওয়ার মানত করে এবং আমিও হাজার বাতি মানত করি।পরে ১৪৪ ধারা জারি করার পর পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।