হরেক রকম মেলার নামে অশ্লিল নৃত্যের জলসা ও মদ-জুয়ার আসর: সংক্ষিপ্ত মন্তব্য
মন্তব্য প্রতিবেদন
সিএইচটিনিউজ.কম
“রাজপুণ্যা‘য় চলছে অশ্লীল নৃত্য ও মদ-জুয়ার আসর” শিরোনামে আজ চট্টগ্রামের দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। শিরোনামটাই সব কথা বলেছে। সুতরাং বিস্তারিত বলার দরকার নেই। পাঠকরা সহজে অনুমান করতে পারবেন কিভাবে ও কার প্রশ্রয়ে এ সব হচ্ছে। তারপরও মন্তব্যের সুবিধার্থে উক্ত শিরোনামের পর যা লেখা হয়েছে তার থেকে সামান্য উদ্ধৃতি দেয়া আবশ্যক। “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় বান্দরবান রাজপুণ্যাহ মেলায় চলছে অশ্লীল নৃত্য এবং মদ-জুয়ার আসর। প্রশাসনের নাকের ডগায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের বাসভবনের সামনে রাজার মাঠে রাতদিনে সমানতালে মদ-জুয়ার আসর বসিয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।” বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: http://www.suprobhat.com/details.php?reqDate=2013-01-05%2000:00:00&catId=1&subCatId=16&conId=34712
রাজপুণ্যা মেলা, আনন্দ মেলা, এমনকি বিজয় মেলার নামে কি হয় তা সবার জানা। কয়েকদিন আগে গত ডিসেম্বর মাসে বিজয় মেলার নামে রাঙামাটির জুরাছড়িতেও অশ্লীলতার ব্যবসা হয়েছে, যা পত্রিকার রিপোর্টে জানা গেছে। ওই বিজয় মেলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোন নাচ গান নাটক ছিল না। কেবল নামেই ছিল বিজয় মেলা। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, গুইমারা, রামগড় ইত্যাদি কয়েকটি এলাকায়ও বুদ্ধমেলার নামে মদ-জুয়ার আসর চলতে দেখা যায়।
বান্দরবানে রাজপুণ্যায় এ ধরনের অশ্লীল কারবার কেবল এবার নয়, ইতিপূর্বেও হয়েছে। শুধু বোমাং রাজপুন্যায় নয়, চাকমা রাজার রাজপুণ্যায়ও ব্রাণবাড়িয়া থেকে যাত্রাপার্টি ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানা যায়। তাই প্রশ্ন জাগে, এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ অত্যন্ত নিম্নমানের যাত্রাগান ও মদ-জুয়া ছাড়া কি রাজপুণ্যাহ হয় না? পুলিশের কথা বাদ দিলেও রাজা, জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য ও জেএসএসেরও কি রুচির পচন ধরেছে?
খাগড়াছড়িতে বিগত জরুরী অবস্থার সময় পর পর দু‘বছর আনন্দ মেলা ও বিজয় মেলা আয়োজনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইউপিডিএফ তার বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে ভণ্ডুল করে দিতে সক্ষম হয়। এর পরে কোন এক বছর শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু তা সত্বেও আয়োজকরা গভীর রাতে কয়েক বার অশ্লীল নৃত্যের আসর বসায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
নাচ, গান, তামাশা প্রাচীন যুগেও ছিল। গৌতম বুদ্ধের সময়ও এসব হতো। মেলায় মদ-জুয়া-মারপিট তখনও হতো। পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার ‘মহামানব বুদ্ধ‘ গ্রন্থে আমাদের জানান: “মেলায় আজও যেমন দেখা যায় – আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ মনোরঞ্জন, মদ্যপান, জুয়াখেলা বা মারপিট – প্রাচীন যুগেও বহু লোকসমাগম হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুগুলি ঘটেই যেত। তাই আমরা দেখি বুদ্ধের নির্বাণের সোয়া দুশো বছর পরে সম্রাট অশোক এ ধরনের নাচ-গান-অভিনয়ের মধ্যে বহুপ্রকারের দোষ জড়িত দেখে এগুলির আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।”
সম্রাট অশোকের মতো আমাদের রাজা ও প্রশাসন মেলার নামে প্রচলিত অশ্লীলতা ও মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এই আমাদের প্রত্যাশা। #
……………..