হাইকোর্টের সামনে দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি ও উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের মানববন্ধন
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
ঢাকা : পৈতৃক ভিটায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর নির্মাণ বন্ধ করা, অবিলম্বে বন্দীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বাড়ি তল্লাশি-হয়রানি বন্ধ করা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ স্ব স্ব জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ঢাকা হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন করেছে বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ-হওয়া দীঘিনালা বাবুছড়ার ২১পরিবার ও দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি।
বুধবার সকাল ১০:৩০টায় দীঘিনলা উপজেলা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা সুসময় চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ-বন্দর বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, নয়াগণতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাদিয়া আরমান, দীঘিনালা ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্ররঞ্জন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ফয়সাল মাহমুদ।
মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেছেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি কমলবাবু সিংহ (মৌলভীবাজার) ও মঙ্গলধ্বণির সম্পাদক তেহেরীণ আরাফাত।
শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় সেনা-পুলিশের হামলার শিকার নারী-শিশু ও বয়স্ক লোকসহ ২৫জনের একটি প্রতিনিধি দল মানববন্ধন করতে গতকাল দীঘিনালা থেকে ঢাকায় পৌঁছেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণও মানবন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা হাইকোর্টের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন দুপুর ১১:৫৮ টা পর্যন্ত চলে।
২১ পরিবারের সাথে পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ-বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মানববন্ধনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন,‘তাদের দাবি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত। যত দিন পর্যন্ত দাবি আদায় না হয় ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সফল হবার জন্য আন্দোলন তেজোদীপ্ত রাখতে হবে।’
জনাব শহীদুল্লাহ দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটিকে দাবি ছাড় না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন,‘তেল-গ্যাস কমিটি এ দাবির সাথে থাকবে।’ তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার হেফাজত করা পরম পবিত্র দায়িত্ব। অথচ তাদের প্রতি অবিচার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। যারা নিরীহ দুর্বল তাদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের জমি কেড়ে নেয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ওপর আঘাত আসছে। আমরা যদি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে এগিয়ে না আসি, তাদের আন্দোলনে সমর্থন না দিই তাহলে আমরা অভিযুক্ত হব।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাদিয়া আরমান ২১ পরিবার ও ভূমি রক্ষা কমিটির দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চাই। অধিক হারে সেনাবাহিনী নিয়োজিত করলে তা হবে না।’ সাদিয়া আরমান জোর দিয়ে বলেন,‘সেনারা কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। মানুষের মাঝে আস্থা তৈরি করতে না পারলে নিরাপত্তা দেয়া যায় না। সশস্ত্র ব্যক্তি দিয়ে তা হয় না।’
জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন চলছে। নারীদের শ্লীলতাহানি ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। দীঘিনালায় বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপনের নামে ২১পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় নি, পুনর্বাসন করা হয় নি।’ টিপু বিশ্বাস প্রশ্ন রেখে বলেন এ রাষ্ট্র কার, বাঙালি, বিহারী বা চাকমাদের? এ রাষ্ট্র নিপীড়ক ফ্যাসীবাদীদের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিপীড়কদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
টিপু বিশ্বাস আরও বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন নানা কথা বলেন। তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, তার কানে কী দীঘিনালা বাবুছড়ার উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের দাবি পৌঁছাবে।’ তিনি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যারা মানবন্ধনের আশে-পাশে রয়েছে, তারা যাতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপিত দাবি-দাওয়া পৌঁছে দেয়।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম অনতিবিলম্বে বাবুছড়ায় উচ্ছেদ-হওয়া ২১পরিবার ও ভূমি রক্ষা কমিটির দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন,‘বিজিবি’র দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা, অথচ তারা তারা পালনের ব্যর্থ। সীমান্তে লোক হত্যা রুখতে পারে না। চোরাচালানি ও নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। জমি দখলে লিপ্ত হচ্ছে। অনেক আবেদন-নিবেদনের পর বাবুছড়ায় ১৫ মার্চ শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা হয়। পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দেখে ভূমিদস্যু বিজিবি সেনাবাহিনী হামলা করেছে। ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জেও সেনা কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য জমি দখল ভূমিদস্যুতার সামিল।’
তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে আরও বলেন, দেশে বাঙালি ভিন্নি আরও ৪৫টির অধিক জাতিসত্তা রয়েছে, তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। এ কারণে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, টাঙ্গাইল মধুপুর সব জায়গায় নিপীড়ন নির্যাতন ও হামলা চলছে নানাভাবে।’
ফয়জুল হাকিম বিদ্যুৎ বন্দর বিদেশী কোম্পানির নিকট তুলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এবং পাহাড়-সমতলে লড়াই করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন নির্যাতন চালানোর জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করেন এবং বলেন সেনাবাহিনীকে দেশরক্ষার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। অথচ সেনবাহিনী জমি দখলে জড়িয়ে পড়ছে।
ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা চন্দ্র রঞ্জন চাকমা মানববন্ধনে সংহতি জ্ঞাপনকারী সবার প্রতি ধন্যাবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিনিধিগণ দীঘিনালায় ভূমি রক্ষা কমিটির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
———————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।