১৩ শর্তে প্রতিনিধি সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে পিসিপিকে জেলা প্রশাসনের চিঠি, পিসিপি’র সড়ক অবরোধ কর্মসূচি বহাল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ১৩ টি শর্তে প্রতিনিধি সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-কে চিঠি দিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মসূচি স্থগিত করার পরই চিঠি পাওয়ায় ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার আট উপজেলায় বিক্ষোভ ও ১১ নভেম্বর পুরো জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধকর্মসূচি বহাল রেখেছে পিসিপি।
গতকাল ৮ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে তড়িঘড়ি করে খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত “বিষয়: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের অনুমতি বিষয়ে মতামত প্রদান প্রসঙ্গে”শিরোনামে ১৩টি শর্ত জুড়ে দিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয় ( যার স্মারক নং-০৫.৪২.৪৬০০.০১২.০৬.০৯১.১৩-১০৫)।
চিঠিতে যেসব শর্তারোপ করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
১. কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করার জন্য খাগড়াছড়ি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের নিকট হতে পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে;
২. আগামী ১১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের আগমন উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভেন্যুতে যেন কোন ধরনের সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে;
৩. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং অনুষ্ঠানস্থলের সামনে রাস্তার উপর যে কোন ধরনের যানবাহন পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না;
৪. শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে;
৫. বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হতে বিরত থাকতে হবে। যদি কোন বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয় তাহলে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে;
৬. কোন রাজনৈতিক/সাম্প্রদায়িক/ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি হয় এমন বক্তব্য প্রদান করা যাবে না;
৭. স্কুল/কলেজে লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটে এমন কাজ কা যাবে না;
৮. সমাবেশস্থল সীমিত পরিসরে এবং স্বল্প আওয়াজে মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ধর্মীয় কার্যক্রম চলাকালে মাইকেল প্রচার বন্ধ রাখতে হবে;
৯. অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও স্কুলের ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হতে বিরত রাখতে হবে;
১০. সম্মেলন চলাকালে যানবাহন ও জনগণের চলাচলে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে;
১১. আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অনুষ্ঠানসমূহের সময়সূচী খাগড়াছড়ি সদর থানা, পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখা, খাগড়াছড়ি ও অত্রাফিসকে অবহিত করতে হবে;
১২. প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগপূর্বক সম্মেলনস্থলের শান্তি-শৃংখলা রক্ষা করতে হবে এবং অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটলে আয়োজক কমিটি দায়ী থাকবে;
১৩. উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতির সংবাদ স্থানীয় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতঃ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে হবে।
উক্ত চিঠির প্রতিউত্তরে আজ ৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরিত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সিমন চাকমার স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাত এবং পুলিশ সুপারের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপের মাধ্যমে পিসিপি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার বিষয়টি অবহিত হয়ে গত ৭ নভেম্বর ২০১৩ ইং বিকেলে আমাদের প্রতিনিধি সম্মেলন স্থগিত করা হয় এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সেই বিষয়টি অবহিত করে না আসতে নির্দেশ দেয়া হয়। সম্মেলন সংক্রান্ত অন্যান্য প্রস্তুতিও পিসিপি স্থগিত করেছে।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন উক্ত সময়ের মধ্যে আর আয়োজন সম্ভব নয় বিধায় পিসিপি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এ প্রসঙ্গে এটাও উল্লেখ্য যে, আমাদের সংগঠন পিসিপি গণতান্ত্রিক রীতি নীতি মেনে নিয়ে সভা সমাবেশ আয়োজন করে থাকে। পত্রের আপনার প্রদত্ত শর্তসমূহ পিসিপি তার সাংগঠনিক দায়িত্ববোধ থেকে তা পালন করে থাকে। পিসিপি গণতান্ত্রিক আইনশৃংখলার প্রতি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাগড়াছড়ি আগমনে নিরাপত্তার উছিলায় জেলা প্রশাসন-৯-১০ নভেম্বর পিসিপি’র পূর্বনির্ধারিত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন আয়োজনে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর প্রতিবাদে পিসিপি ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির সকল উপজেলায় বিক্ষোভ ও ১১ নভেম্বর পুরো জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ঘোষণা এবং এবং প্রতিনিধি সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি স্থগিত করে। এ ঘোষণার পরদিনই তড়িঘড়ি করে জেলা প্রশাসন ১৩ শর্তে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে পিসিপিকে চিঠি দেয়। যার ফলে পিসিপি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বহাল রাখে।