ইতিহাস

১৪ ফেব্রুয়ারি: স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস

0

ঢাকা: আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।’ ১৯৮৩ সালের এই দিনে তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, বন্দি মুক্তি ও দমননীতি বন্ধ এবং গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নামা ছাত্র-জনতার রক্তে লাল হয় ঢাকার রাজপথ।

সেদিন পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে প্রাণ হারান জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী, মোজাম্মেলসহ আরও অনেক তাজা প্রাণ। গণগ্রেফতারসহ নির্মম নির্যাতনের শিকার হন দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।

ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এবং বাংলাদেশের সংবিধান রহিত করে সাত্তারের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করেন। একইসাথে তিনি নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক আইনে জারিকৃত সব বিধিবিধান ও আদেশকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করেন।

একই বছর এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। এই শিক্ষানীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, বন্দি মুক্তি ও দমননীতি বন্ধ এবং গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন এবং মিছিল নিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সেদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে রাজপথে নামেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও জনতা।

শান্তিপূর্ণ মিছিলটি হাইকোর্টের গেটের সামনে পুলিশ ব্যরিকেড দিয়ে বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়ে এবং ছাত্রনেতারা তারের ওপর উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। এসময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে তারের একপাশ সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে দিয়ে রঙ্গিন গরম পানি ছিটাতে থাকে, বেধড়ক লাঠিচার্জ, ইট-পাটকেল ও বেপরোয়া গুলি ছুড়তে শুরু করে। ঐদিন জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী সাহা, মোজাম্মেলসহ অনেকে প্রাণ হারান। তবে নিহত দিপালিসহ আরও অনেকের লাশ খুজে পাওয়া যায়নি।

ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয়।

তারপর থেকে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এ ঘটনা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন অনিবার্য করে তোলে। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদের স্বৈরাচারী যুগের অবসান ঘটে।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More