দীঘিনালায় বিজিবির মতবিনিময় সভা
২১ পাহাড়ি পরিবারকে দ্রুত পুনর্বাসনের আশ্বাস বিজিবির
দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকায় ৫১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ২১টি পাহাড়ি পরিবারকে দ্রুত পুনর্বাসন করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের সময় সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করারও আশ্বাস দিয়েছেন বিজিবির কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার সকালে ৫১ বিজিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিজিবির পক্ষ থেকে এসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের জুন মাসে বাবুছড়া এলাকায় ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ওই এলাকায় ২১টি পাহাড়ি পরিবার বাস করত। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয় তারা। সেখানে আট মাস থাকার পর কৃষি অফিসের একটি পরিত্যক্ত কার্যালয়ে হয় এসব পরিবারের ঠিকানা। ২১ পরিবারের মোট ৮৪ জন সদস্য গত আড়াই বছর মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গতকালের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিজিবির খাগড়াছড়ি সেক্টরের অধিনায়ক কর্নেল মতিউর রহমান, ৫১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইকবাল হোসেন, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগতপ্রিয় চাকমা, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিমেল চাকমা, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন হেডম্যান (মৌজাপ্রধান), কার্বারি (গ্রামপ্রধান) উপস্থিত ছিলেন।
অতীতের ঘটনার রেশ না টেনে সহমর্মিতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ২১টি পরিবারকে অতিদ্রুত পুনর্বাসন করার দাবি জানান দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা ও বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগতপ্রিয় চাকমা। তাঁরা বিজিবির দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও বিজিবির মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা বলেন, ওই সময় (২০১৪ সালে) কার বা কাদের ইন্ধনে বিজিবির সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই। আগে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। তখন মানুষ শিক্ষিত ছিল না কিন্তু আন্তরিকতা অনেক বেশি ছিল। আর এখন মানুষ যতই শিক্ষিত, সভ্য হচ্ছে ততই আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আলোচনা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক বোঝাপোড়ার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ২১টি পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় বিজিবির খাগড়াছড়ি সেক্টরের অধিনায়ক কর্নেল মতিউর রহমান বলেন, বিজিবি ব্যাটালিয়নের কারণে ওরা (২১ পরিবার) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা বাস্তব। তাদের পুনর্বাসন করা হবে এটাও বাস্তব। তিনি বলেন, ‘২১ পরিবারের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা, সহানুভূতি রয়েছে। আমরা একটা পর্যায়ে এসে গেছি, পারস্পরিক বিশ্বাস এসেছে। অবশ্যই সমস্যার সমাধান হবে। অতিদ্রুতই ২১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। ২১টি পরিবার পুনর্বাসন হলে সমস্যা আর থাকবে না। তখন মামলা, রিট সবই আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাহার হবে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে একটা সুখবর দেওয়া যাবে।’
সৌজন্যে: প্রথম আলো
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।