২৫ মার্চ কাউখালী গণহত্যা দিবস

0
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আজ ২৫শে মার্চ কাউখালী গণহত্যা দিবস। ১৯৮০ সালের এই দিন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর সেটেলার দ্বারা এক বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো। এদিন জনসভার কথা বলে সেনা কর্মকর্তারা সভায় আগত লোকদের ওপর নৃশংসভাবে ব্রাশ ফায়ার করে এবং সেটলারদের লেলিয়ে দেয়। সেনা ও সেটলারের হামলায় এ হত্যাকাণ্ডে ৩০০-এর অধিক নিরীহ পাহাড়ি প্রাণ হারায়। নিকটস্থ বৌদ্ধ বিহারে হামলা করে ভিক্ষুকেও গুরুতর জখম করে এবং পুরো এলাকা তাণ্ডব লুটপাট চালায়। এ হত্যাকাণ্ড ১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সাথে তুলনীয়।

এ ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য :
সেদিন স্থানীয় সেনা ইউনিটের প্রধান এক ধর্মীয় সভা আহ্বান করে কলমপতি ইউনিয়নের পাহাড়ি নেতাদের জড়ো করেন এবং সাধারণ পাহাড়িদেরও সকাল বেলায় পোয়াপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরের সংস্কার কাজের জন্য ডাকেন। তারপর সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতের মধ্যে বাজার চৌধুরী কুমুদ বিকাশ তালুকদার, স্থানীয় ইস্কুল কমিটির সেক্রেটারী শরদিহর চাকমাও রয়েছেন। এদের হত্যা করেও সেনাবাহিনী ক্ষান্ত হয়নি। তারা সেটলারদের নিয়ে পাহাড়ি অধ্যুষিত কাউখালী মুখ পাড়া, পোয়াপাড়া, কাউখালী বাজার, তোং পাড়া এবং হেডম্যান পাড়া আক্রমণ করে। সেনাবাহিনী গ্রামের চারিপাশে ঘিরে থাকে যাতে কেউ বেরুতে না পারে। আর সেটলাররা দা, কুড়াল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের কুপিয়ে হত্যা করে ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। মুখপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, তোং পাড়া আনন্দ মোহন বৌদ্ধ মন্দির, পোয়া পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কাউখালী বৌদ্ধ মন্দির এবং হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধমন্দিরও এদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

ঘটনার প্রায় একমাস পর ২১শে এপ্রিল (১৯৮০) তিন সদস্যের একটি বিরোধী সংসদীয় তথ্যানুসন্ধানী দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শাহজাহান সিরাজ, রাশেদ খান মেনন এবং উপেন্দ্র লাল চাকমার সমন্বয়ে গঠিত এই টিম ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, “It is obvious to us that the incident of Kalampati is not an isolated event. It has been perpetrated systemmatically and with a definite plan”. (সূত্র: রাডার, লোগাং গণহত্যা সংখ্যা)

এ হত্যাকাণ্ডের পর এক হাজারের অধিক পাহাড়ি রিফিউজি হিসেবে ভারতের ত্রিপুরায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমানে ঐ জায়গাগুলো সেটলাররা বেদখল করেছে, বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় মসজিদ বানানো হয়েছে।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More